M K Dutta Publication Forum

Sale!

অষ্টছ্যাঁদা (Ostochayanda)

৳ 400.00 ৳ 350.00

অষ্টছ্যাঁদা (Ostochayanda)

By Manoj Dutta

It’s a book of comic fallacy related with the recent incidents. The literal whip of bull’s eye exposure ultimately turns into more powerful in comparison to the classic languages.  

[ অনুমতি ব্যতিত এ লেখার কোন অংশের কোনরূপ প্রতিলিপি বা পুনরুৎপাদন করা যাবেনা। ফটোকপি, স্ক্যান, কম্পোজ, ইমেজ, টেপ, ডিস্ক, ড্রাইভ, পারফোরেট মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, গ্রাফিক্স, ইলেকট্রনিক কিংবা পুনরুদ্ধারের সুযোগ সম্বলিত তথ্য সংরক্ষণের অন্য যেকোন যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক উপায়ে, মনোজ দত্ত লিখিত কপিরাইটেড ‘অষ্টছ্যাঁদা’ -বইটির এ অংশের কোন নকল করা যাবে না। ]

www.mkdpf.com

Category:

Description

অষ্টছ্যাঁদা (Ostochayanda)

By Manoj Dutta

—————————

করোনাওয়াশ  

—————————

আলেকজান্ডারের বিশাল সেনাদল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পার হয়ে নবীনগর অতিক্রম করে আমিনবাজার ব্রিজের উপকণ্ঠে ঢাকায় ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেকান্দার এসেছেন বঙ্গ বিজয়ে। গেলবার সুবিধা করতে পারেননি, বিশাল মরুভূমি পার হয়েও গঙ্গারাষ্ট্রে ঢোকা হয়নি তাঁর। এবার দেশের নাম পাল্টেছে। রূপও পাল্টেছে। শান্ত সমাহিত শহরের পর শহর বিনা বাধায় পার হয়ে ভারত জয় করেছেন। তাঁর বিশাল বাহিনীর গেরুয়া বর্ণের পোশাক ও হিমালয় থেকে দেবাদিদেব মহাদেব দর্শন করে এসেছেন শুনে কপালে দু’হাত ঠেকিয়েছেন ভারতেশ্বর বীরেন্দ্র গোদি। হাজার বছর আগের পুরনো কৌশল ধর্মকে কাজে লাগানো গেছে ভালোভাবেই। সেকান্দার অবাক হলেন। এরা কিসের সভ্যতা আর বিজ্ঞানের গর্ব করে! অবশ্য এখন নতুন এক অদেখা শত্রু পুরো পৃথিবী জয় করার দাবি করছে। আলেকজান্ডার মেনে নেননি। এই শত্রুর নাম করোনা। তিনি এই করোনার মুখোমুখি হতে চান। দূত মারফত খবর পেয়েছেন দুঃসাহসী খতরনাক যোদ্ধা করোনা পূর্ববঙ্গে আঞ্চলিক ঘাঁটি করেছে। বঙ্গদেশে ঢোকার আগে সেনারা বেশভূষা বদলেছে। মাথায় ইসলামি টুপি। ঈদের সময়। তাই মোটা গরদের পাঞ্জাবি সদৃশ পোশাকে ঢাকা সেনাদল। 

তিনি সেলুকাসকে খুঁজছেন। অগ্রবর্তি দল পাঠানো হয়েছে ঢাকার অবস্থা বোঝার জন্য। মধ্যাহ্ন আহারের সময়। আলেকজান্ডার আহার সারলেন। ভেবেছিলেন সমস্যা হবে। সমস্যা হলো না। দোকান-পাট খোলা। বাজারে প্রচুর রসদ পাওয়া গেল। অদেখা দুশমন করোনা মোকাবেলায় দুনিয়ার সবাই ঘরবন্দি থেকে লকডাউন না সে ধরণের কি একটা কৌশল পালন করছে। ব্যতিক্রম দেখলেন বঙ্গদেশে। এখানে সবাই আনলকড্ অবস্থায় লকডাউন করছে। বীর বাঙালি বলে একটা প্রবাদ তিনি শুনেছিলেন বটে! সেলুকাস এসে তাঁকে অভিবাদন জানালেন।

আলেকজান্ডার : কী খবর সেলুকাস?

সেলুকাস : মহামান্য, খবর অতীব সুখকর।

আলেকজান্ডার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিলেন।

সেলুকাস : আমরা স্বচ্ছন্দে ঢাকায় ঢুকবো। ঢাকার সব প্রবেশ পথ খুলে দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত পরিবহনে পুলিশ কিছুই বলবে না।

আলেকজান্ডার : কিন্তু আমি জানতাম ঢাকা অন্য বিভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন। ঢোকা এবং বের হওয়া বন্ধ।

সেলুকাস : মহামান্য এটা বঙ্গদেশ। এখানে সবকিছু সীমিত আকারে হয়।

আলেকজান্ডার : সীমিত আকারে? সেটা আবার কী? বুঝিয়ে বল।  

সেলুকাস : মহামান্য, যেমন আপনি কোন সৈন্যের গলা পুরোপুরি না কেটে অর্ধেকটা কাটলেন। সে অর্ধেকটা মরবে। তাকে পূর্ণমৃত বলা যাবে না। সে সীমিত আকারে বাঁচবে।

আলেকজান্ডার : জীবিত থেকেও মৃত বলছো?

সেলুকাস : বঙ্গভাষায় বলে জীবন্মৃত। 

আলেকজান্ডার : হুম, ..  দূত মারফত জানলাম ত্রিশ তারিখ পর্যন্ত সব বন্ধ।  

সেলুকাস : হাট-বাজার, ব্যবসাকেন্দ্র, দোকান-পাট, শপিং মল সব দশ তারিখ থেকে খোলা। এছাড়া কৃষিপণ্য, খাদ্য, শিল্পপণ্য, খাবার দোকান, ঔষধ, কাঁচাবাজার, হাসপাতাল, গণমাধ্যম, ক্যাবল টিভি, ইন্টারনেট, পোশাক শিল্প, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, জরুরি সেবা, ইত্যাদি সম্পূর্ণভাবে ছুটির আওতামুক্ত থাকবে।   

আলেকজান্ডার : শুনলাম রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা কেউই বাড়ির বাইরে আসতে পারবে না।

সেলুকাস : জরুরি প্রয়োজনে তা-ও শিথিল হবে মহামান্য।  

আলেকজান্ডার : জরুরি প্রয়োজন? এটা আবার কি?   

সেলুকাস : যেটা না করলেই নয়, তা হলো জরুরি প্রয়োজন। একেক জনের জরুরি প্রয়োজন একেক রকম হতে পারে। (মাথা নিচু করে) যেমন আপনার জরুরি প্রয়োজন সুরা পান, মহামান্য।   

আলেকজান্ডার : ঠিক বলেছো সেলুকাস, জামবাটিতে সুরা আনতে বলো।

সেলুকাস : (কানের কাছে ফিসফিস করে) .. এটা রমজান মাসের শেষ মান্যবর, ঈদের ছুটি চলছে। আর বঙ্গদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সুরা হারাম।  

আলেকজান্ডারের চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো।  

আলেকজান্ডার : রাষ্ট্রধর্ম জিনিসটা কী?

সেলুকাস : মান্যবর বঙ্গদেশের ধর্ম ইসলাম। এটাই রাষ্ট্রের ধর্ম। 

আলেকজান্ডার : দেশের আবার ধর্ম হয় নাকি? গর্দভ। দেশের হয় মানচিত্র, নদ নদী, খনিজ সম্পদ। মাটির নীচে লুকানো গুপ্তধন। ধর্ম দেশের কোথায় ঝোলানো থাকে? গর্দভ বাঙালি।

সেলুকাস : মান্যবর, বাঙালি সীমিত আকারে গর্দভ।

আলেকজান্ডার : কেন? কেন?

সেলুকাস : সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রের সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে লেখা আছে।

আলেকজান্ডার : সমাজতন্ত্র আর গণতন্ত্র একসাথে? কিভাবে সম্ভব? 

সেলুকাস : (স্বর নিচু করে) যেভাবে পানিতে সুরা মেশে মান্যবর। আর যেভাবে আপনি ধর্মকে মিশিয়ে দিয়েছেন সেনাদের পোশাকে।  

আলেকজান্ডার : ওটা সমরের কৌশল, সেলুকাস।

সেলুকাস : রাষ্ট্রধর্মও করেছিলেন আপনারই মতো এক সেনাপ্রধান। তিনিও ফায়দা হাসিলের কৌশল হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করেছেন বঙ্গদেশে।

অনেক মোটরযানের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সেকান্দার দেখলেন হাজার খানেক প্রাইভেট কার ও লাইটেস নামের এক জাতীয় গাড়ি তৈরি রাখা হয়েছে। লকডাউনের হালাল বাহন। কিছু গাড়ি বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে আনা হয়েছে। গার্মেন্টস ও অন্যান্য জরুরি কারখানা খোলা থাকায় গাড়ি পেতে কোন সমস্যা হয়নি। অনেক গাড়ির মালিকরা নিজেরাই বসে আছেন ড্রাইভিং সিটে। সেকান্দারকে দেখার সুযোগ কেউ হারাতে চায় না। এমন একজন মানুষ সেকান্দারের সাথে হাত মেলালেন। বুকও মেলাতে চেয়েছিলেন, দি গ্র্যাটের দেহরক্ষীরা তা হতে দেয়নি। তিনি বিশাল সব ফ্যাক্টরির মালিক। আসল কথা হলো তিনিও করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তাঁর ফ্যাক্টরিতে অনেক করোনাকে গুলি করে মারা হয়েছে। সেই থেকে তাঁর নাম করোনা জলিল। তিনি এমন এক পিপিই তৈরি করছেন যা পরা থাকলে আজরাইল, হেডিস বা আনুবিস কেউই জান কবজ করতে পারবে না। অসম্ভবকে সম্ভব করাই করোনা জলিলের কাজ। করোনা জলিলকে সেকান্দারের সেনাদলে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।   

আলেকজান্ডার : পিপিই কী সেলুকাস?  

সেলুকাস : মহামান্য এটা এক বিশেষ পোশাক যা করোনা থেকে বিশেষ সুরক্ষা দেয়।

আলেকজান্ডার : গেরুয়া বলছো?

সেলুকাস : না মহামান্য 

আলেকজান্ডার : স্যুট-টাই? সাথে বুট জুতা?

সেলুকাস : না মহামান্য 

আলেকজান্ডার : পায়জামা-পাঞ্জাবি? সাথে নামাজি টুপি?

সেলুকাস : না মহামান্য 

আলেকজান্ডার : তবে?

সেলুকাস : এটা পিপিই। করোনা জলিল আপনার সুরার বন্দোবস্ত করেছেন, মান্যবর। পাঁচতারকা হোটেলের বিশেষ কক্ষ হতে এ সুরা সরবরাহ হবে।   

আলেকজান্ডার : তুমি না বললে ইসলামে সুরা হারাম .. এরপর রমজান ও ঈদ।   

সেলুকাস : পাঁচতারকা হোটেলের জন্য এ নিয়ম শিথিল, মহামান্য। 

আলেকজান্ডার : কেন? সেখানে কোন মুসলমান নেই?

সেলুকাস : মনে হয় সীমিত আকারে আছে।

সেকান্দার সুরাতে চুমুক দিলেন। তাঁর দু’হাতে জামবাটি ধরা। জামবাটি আনা হয়েছে হস্ত ও কারুশিল্পের প্রতিষ্ঠান আড়ং হতে। তাঁর জরুরি প্রয়োজন মিটল।    

আলেকজান্ডার : আচ্ছা সেলুকাস, পাঁচতারকা কী? আকাশের তারা?

সেলুকাস : তা নয় দি গ্র্যাট! এ তারকা পঞ্চম হলো পাঁচটি বিশেষ সুবিধা। অত্যাধুনিক বাস কক্ষ, সব ধরণের আহার্যের ব্যবস্থা, সাঁতারের ও ব্যায়ামের আয়োজন, মদ্যপানের সুপরিসর সরবরাহ এবং বিনোদনধর্মী নারী-পুরুষের নৃত্যকলার নিশি উৎসব।  

আলেকজান্ডার : বলছো জিউস যেভাবে থাকতেন ঐ পাঁচতারকায় সে সবকিছুই পাওয়া যায়?

সেলুকাস : তবে কিছুটা সীমিত আকারে মনে হয়, মহামান্য।  

আলেকজান্ডার : করোনা খতম করার পর আমি ওখানে যাবো। বঙ্গদেশ অনেক উন্নত হয়েছে দেখছি। আচ্ছা এখানে কেউ পিপিই পরেনি কেন?

সেলুকাস : চিকিৎসা কাজে, করোনা রোগির সান্নিধ্যে যাঁরা আছেন এবং ডাক্তাররাই পিপিই পরছেন।

আলেকজান্ডার : ডাক্তাররা এখানে নেই কেন?

সেলুকাস : মান্যবর, ডাক্তাররা এখন হাসপাতালে। এখানে ওনাদের দেখা মিলবে না। 

গাড়ির বহর রওয়ানা হবে। এমন সময় একটা বিজাতীয় শব্দ পাওয়া গেল। সৈনিকদের মধ্যে শুরু হয়েছে হট্টগোল। একটা বিশালাকার পাখি গোঁ গোঁ আওয়াজ করে আকাশে উড়ে গেল। সেলুকাস বাইরে এলেন ঘটনা বুঝতে। গাড়ির এই ব্যাপক বহর যাবে ঢাকা সেনানিবাস। বঙ্গের সেনা প্রধানের সাথে বসে আক্রমণের ছক সাজাবেন আলেকজান্ডার। সে সুযোগে দেখা বোঝা ও বিশ্লেষণ করা যাবে বঙ্গসেনাদের শক্তিমত্তা। করোনা খতমের পর সেকান্দারের সৈন্যরা বঙ্গদেশ আক্রমণ করবে। সব পরিকল্পনা করে এসেছেন তিনি। তবে আগে করোনা। এই করোনা দেশে দেশে তাঁকে জ্বালিয়েছে। সেনাদল পাঁচভাগের দু’ভাগই হারিয়েছেন করোনার ছোবলে। পেছনে শত্রু রাখতে নেই। তাই আগে করোনা। করোনা বঙ্গদেশেরও শত্রু। শত্রুর শত্রু রণে মিত্র বলেই বিবেচিত।  

আলেকজান্ডার : কী হলো সেলুকাস?

সেলুকাস : মান্যবর, সেনারা কখনো বিমান দেখেনি – তাই এ কলরব।

আলেকজান্ডার : তুমি না বললে করোনা রুখতে সব ধরণের সীমান্ত ও বহির্বিশ্বের সাথে বিমান চলাচল বন্ধ করেছেন কওমি জননী।

সেলুকাস : তা ঠিক মহামান্য। তবে প্রবাসী বাংলাদেশি, কূটনীতিক ও বিদেশ প্রত্যাগতদের জন্য বিশেষ বিমান চলাচল করছে।   

আলেকজান্ডার : আমরা পদব্রজে কষ্ট করলাম!    

সেলুকাস : আমরা তো যোদ্ধা মান্যবর। আমাদের তাকত হাতে ও পায়ে। 

আলেকজান্ডার : এবং মগজে। বঙ্গদেশে মগজের তাকতওয়ালাদের একটা তালিকা করো। কাজে দেবে। এদের মগজ ধোলাই দিতে হবে। এটাও যুদ্ধের অংশ।   

সেলুকাস : তালিকা রেডি আছে মান্যবর। বেশিরভাগ আমাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন। মিডিয়া ও সাংবাদিকদের সহজে ধোলাই করা গেছে। আইনজ্ঞদের জজ করার লোভ দেখিয়ে হাতে রেখেছি। শিক্ষকরা আগে থেকেই দু’ভাগ ছিল। ব্যবসায়ীদের খেলাপি ঋণ মওকুফ করে নির্বাচনের টিকিটে সাংসদ করা হবে। খেলোয়াড়দের অনেককেই রাজনীতিতে ঢুকিয়ে দিয়েছি। রবীন্দ্র-নজরুল শিল্পীদের মিডিয়াগুলোতে সকাল বিকাল গানের সিডিউলে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। তারাও গান গেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে যেন যৌনসুখ পাচ্ছে।

আলেকজান্ডার : হা হা হা সেলুকাস। কি যে বলো .. ফেসবুক কী?  

সেলুকাস : এটা এক ধরণের মাধ্যম যেখানে সবাই সবার ছবি দেখে, কথা বলে।

আলেকজান্ডার : অদৃশ্য করোনার সাথে কথা বলা যাবে?

সেলুকাস : না মহামান্য

আলেকজান্ডার : ফেসবুক করোনা ঠেকাতে পারে? শেষ করে দিতে পারে এ শত্রুকে?

সেলুকাস : না মহামান্য 

আলেকজান্ডার : তবে ফেসবুক আমার জন্য ডেথবুক। বিজ্ঞানীদের কী খবর?

সেলুকাস : এনাদের কাউকে রাজনীতিবিদরা কিনে নিয়েছেন, আর কেউ নিজেরাই রাজনীতিবিদ। কেউ সায়েন্স ফিকশন লেখেন আর অতি অল্পসংখ্যক বিজ্ঞানী ও পুরো  চিকিৎসক সমাজ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত।

আলেকজান্ডার : নোবেল পুরস্কার একুশে পদক আর স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া বাঘা বুদ্ধিজীবীরা কোথায়?

সেলুকাস : ওনারাই সবার আগে বিক্রি হয়েছেন। এখন সবাই করোনার আতংকে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি।  

আলেকজান্ডার : ডাক্তারদের অবস্থা?   

সেলুকাস : ওরা পিপিই -এর গরমে সিদ্ধ হয়ে কলুর বলদের মতো হাসপাতালে হাসপাতালে সেবা দিচ্ছে। ওরা কেউ সরকার আর আপনার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করবে না।

আলেকজান্ডার : তবে?

সেলুকাস : সমস্যা হলো একশ্রেণির লেখক আর কবিদের নিয়ে। এদের একটা অংশকে ধোলাই দেয়া গেছে। আরেকটা অংশ নিলামে উঠেছে। কিন্তু কিছু ঘাড়ত্যাড়া কবি সত্য বচন লিখে যাচ্ছে। লিখেই যাচ্ছে। এদের কেউ কেউ আবার ডাক্তার।

আলেকজান্ডার : টু দ্য পয়েন্ট বলো। নাম বলো। ঠিকানা বলো।

সেলুকাস : টু দ্য পয়েন্ট তথ্য আছে। তবু কিছু করা যাচ্ছে না। 

আলেকজান্ডার : হোয়াই? গুম করে দাও।

সেলুকাস : গুম করেও লাভ হবে না। এই কবিরা কলমে প্রাণসঞ্চার করেছে। কবি মারা গেলেও তার কলম লিখে যাবে। 

আলেকজান্ডার : অন্য কৌশল করো। কামের জাল বিছিয়ে দাও। কবিরা কামপ্রবণ হয় শুনেছি।

সেলুকাস : সেটাও করেছি মান্যবর। শ্মশ্রুমন্ডিত বুড়ো কবি আর লেখকরা কামে বুঁদ হয়ে আছে।

আলেকজান্ডার : তবে সমস্যা কোথায়?

সেলুকাস : সমস্যা মনোজ দত্ত। প্রভাব বা প্রলোভন তার বেলায় কাজ করছে না। সে যা লিখছে তাতে গায়ে জ্বালা ধরে যাচ্ছে। হাই স্পিড এসির বাতাসেও জ্বলুনি কমছে না। আমাদেরও ছেড়ে কথা বলে না, মান্যবর।

আলেকজান্ডার : তাকে ডিজিটাল আইনে গ্রেপ্তার করে না কেন সরকার? আমাদের কাজ আগেই করে রাখুক।  

সেলুকাস : তাকে পাওয়াই যায় না, মহামান্য। আজ এখানে তো কাল ওখানে। করোনা আক্রমণের পর থেকে গায়েব। দিন চারেক বঙ্গদেশে ছিল। তারপর ব্রহ্মদেশ হয়ে না কি তিব্বত। তিব্বত থেকে নেপাল। সবই শোনা কথা। কেউ বলছে সে ছিল গ্রীসে, আবার এখন না কি শ্রীহট্টে বসে করোনা-কালের ইশক্ লিখছে।

আলেকজান্ডার : সে কি ভূ-পর্যটক না যোদ্ধা? আমার মতো ঘুরছে কেন?

সেলুকাস : না মহামান্য। সে কলম যোদ্ধা। তার পাবলিকেশনের শাখা করছে দেশে দেশে।

আলেকজান্ডার : এই পাবলিকেশন কী? এটা কি কোন অস্ত্রাগার? 

সেলুকাস : না মহামান্য। এখানে অস্ত্র তৈরি হয় না।

আলেকজান্ডার : তবে ভয় কিসের?

সেলুকাস : এখানে বই তৈরি হয় মান্যবর। অস্ত্রের চাইতেও ভয়ংকর অস্ত্র বই।

আলেকজান্ডার : তুমি বড্ড গোলমেলে কথা বলো। কী যেন ইশকের কথা বলছিলে? 

সেলুকাস : করোনা-কালের ইশক্। মানে প্রেমের কবিতা। প্রেমকাব্য তো নয়, যেন আপনার বর্শার চাইতেও তীক্ষ্ণ। 

হুজুর ও মাওলানাদের একটা দল সেকান্দারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চায়। সেলুকাস সন্ধিগ্ধ চোখে এদের দেখছেন। সবার চেহারাই আল্লাহর বান্দা টাইপ। তফাত করা মুশকিল। একজন বোতলে কিছু স্বপ্নপ্রাপ্ত তরল নিয়ে এসেছে। এ তরল না কি করোনা প্রতিরোধের অব্যর্থ তরিকা। আব্রাহাম হুজুর এটি আলেকজান্ডারকে খাইয়ে দিতে চায়। সেলুকাস প্রমাদ গণলেন। ধর্মযাজক শ্রেণীর লোকদের বিশ্বাস করা যায় না। এরা পরজীবীর মতো রাজার সাথে থেকে রাজারই সর্বনাশ করে। প্রাচীন মিশরেও তাই হয়েছে। বোতলে বিষও থাকতে পারে। ঢাকার অনেক জায়গায় লোকজন সেকান্দারের বাহিনীকে দেখানোর জন্য জুতা হাতে রাস্তায় নেমেছে। হুজুরে তেঁতুল নামের এক মাফি আমির ও তার অনুসারিরা সেকান্দারকে ইহুদি নাসারা আখ্যা দিয়ে ফাঁসির দাবিতে মিছিল করেছে। ফলে বোতল পরখ করতে হবে। সেলুকাস নিজেই শিশির ছিপি খুললেন। উষ্ট্র ও ঘোটকের মিশ্রিত মূত্রের উৎকট গন্ধ পাওয়া গেল। আলেকজান্ডার আব্রাহাম হুজুরকে তৎক্ষণাৎ কতল করার নির্দেশ দিয়ে গাড়িতে উঠলেন।    

ঢাকা সেনানিবাস আলেকজান্ডারকে নিরাশ করলো। খোদ সেনাপ্রধান করোনায় আক্রান্ত। তিনি মিলিটারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেকান্দার আর ওমুখো হলেন না। তাঁর বিশালদেহী অবয়বের সাইজ পিপিই পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ও সেনাদের সন্মানে নৈশভোজের ব্যবস্থা হলো ঈদের দিন রাতে। মৎস্য ভবনের কাছের এক পাঁচতারকা হোটেলের পুরোটাই ছেড়ে দেয়া হলো সেকান্দার বাহিনীকে। যত্ন ও প্রমোদের শেষ নেই। সেকান্দারের রাজজ্যোতিষী জিউসের কাছ থেকে ইশারা পেয়েছেন সব করোনাকে দৃশ্যমান পর্যায়ে এমনভাবে রাখা হবে যেন সহজেই সেকান্দারি তরবারিতে কাটা পড়ে।

কিছুদিন থেকে সেলুকাসের সঙ্গ কম পাচ্ছেন সেকান্দার। প্রয়োজনও তেমন হচ্ছে না। পাঁচতারকার সব তারার আলোয় আলোকিত আলেকজান্ডার। তিনি নিজেও এক তারা। তবু তাঁর মনের কোণে কোথায় যেন অন্ধকার। ইদানিং শরীর খুবই উত্তপ্ত থাকে। সেটা হয়তো তাঁকে ঘিরে থাকা ললনাদের প্রভাব। পাঁচতারকার সবই ঠিক আছে, কিন্তু কেন যেন কর্মিদের দক্ষতার বড়ই অভাব। আলেকজান্ডার ঘুণাক্ষরেও টের পেলেন না হোটেলের চারশ কর্মির সবাই করোনা রোগি যারা করোনার সবচেয়ে মারাত্মক জীবাণু বহন করছে। হাসপাতাল থেকে সরাসরি বিশেষ পরিকল্পনায় এ পোস্টিং হয়েছে। বঙ্গীয় সামরিক গোয়েন্দা দফতর পুরো ঘটনাই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করছে।

সেকান্দারের শ্বাসকষ্ট কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রায় সব সেনাই আক্রান্ত। কৃত্রিম কাশির অভিনয় করে সেলুকাস ঘরে ঢুকলেন।

আলেকজান্ডার : (অনেক কষ্টে হাঁপিয়ে) এই বাংলাকে তো আর দাবায়ে রাখতে পারলাম না। বঙ্গবিজয় হলো না।

সেলুকাস : (অসুস্থতার ভান করে) মান্যবর, যতক্ষণ এ দেহে প্রাণ আছে লড়বো। এ সবই শেখের বেটির চাল।

আলেকজান্ডার : শেখ? তুমি কি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কথা বলছো? (সেকান্দার অসুস্থ অবস্থাতেও শ্রদ্ধায় মাথা নিচু করলেন)

সেলুকাস : আমি শেখ সাহেবের কথাই বলছি।

আলেকজান্ডার : এই একটা মানুষ লড়েছিলেন। আমি তাঁকে হারাতে পারলাম না। বাঙালি অজেয়ই থেকে গেলো।

সেলুকাস : আমি পারবো কথা দিলাম মহামান্য। (ফলের রসপাত্র এগিয়ে দিতে দিতে) আপনি এটি পান করুন মান্যবর (রসের সাথে মিশ্রিত ছিল বিষধর হেমলক)।

সেকান্দার পুরোটাই নিঃশেষে ঢেলে দিলেন গলায়। তাঁর চোখ ছোট হয়ে আসছে।

আলেকজান্ডার : সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এ দেশ!   

সেলুকাস বেশ তাড়াহুড়ো করছেন। তাঁকে নতুন মন্ত্রিসভায় শপথ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ডান হাত। বঙ্গদেশে ক্ষমতার স্বাদই আলাদা।

মুজিবকোটটা সাইজে একটু বড় হয়েছে। ব্যাপার না। সেলুকাস মাস্ক লাগালেন। সেকান্দারকে রসপাত্র দিয়েছিলেন যে হাতে তা সাবান দিয়ে ধুয়ে নিলেন বিশ সেকেন্ড। মাথার টুপিটা খুবই ইসলামিক। বঙ্গদেশে বলে মোশতাক টুপি।  

এন্টি-করোনা স্প্রে করা গাড়িতে উঠলেন শেখ সেলুকাস।   

——————————————————————-

“এই লেখার চরিত্র বা চরিত্র সমূহের সাথে অতীত ও বাস্তবের আংশিক কিংবা পূর্ণ সামঞ্জস্য বা অসামঞ্জস্য নিছক ভাবনা প্রসূত। কোন ব্যক্তি, পরিবার, গোষ্ঠী, সমাজ, সংগঠন, সংস্থা, ধর্ম, তত্ত্ব বা রাষ্ট্রনীতিকে কোন প্রকার আঘাত দেয়া বা সম্মানিত করা; কোনটাই কাহিনীকারের অভিপ্রায় নয়।”

[ অনুমতি ব্যতিত এ লেখার কোন অংশের কোনরূপ প্রতিলিপি বা পুনরুৎপাদন করা যাবেনা। ফটোকপি, স্ক্যান, কম্পোজ, ইমেজ, টেপ, ডিস্ক, ড্রাইভ, পারফোরেট মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, গ্রাফিক্স, ইলেকট্রনিক কিংবা পুনরুদ্ধারের সুযোগ সম্বলিত তথ্য সংরক্ষণের অন্য যেকোন যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক উপায়ে, মনোজ দত্ত লিখিত কপিরাইটেড ‘অষ্টছ্যাঁদা’ -বইটির এ অংশের কোন নকল করা যাবে না।]

========================================  

করোনাওয়াশ  -লেখা হয়েছিল ঘোর করোনাকালে।

এখনো ঘোর কাটেনি। থামেনি মৃত্যু। মার্কিন মুল্লুকে দৈনিক ৪৪৭০ মৃত্যুর সর্বশেষ রেকর্ড তৈরি হয়েছে। তবে মানুষের কাছে করোনামৃত্যু এখন অনেকটাই গ্রহণযোগ্য, অনেকটাই স্বাভাবিক। অষ্টছ্যাঁদা  -বইটির রম্য নিবন্ধগুলোর ভেতর করোনাওয়াশ অন্যতম। আপনি কি জানেন এখন ৩য় বিশ্বযুদ্ধ চলছে? …   

চলছে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ এবং ভাইরাল ভাইরাসের রাজনৈতিক মিসাইল — শিরোনামে লেখাটির আগে করোনাওয়াশ -কে স্যাটায়ার হিসেবে প্রাসঙ্গিক মনে করছি। 

করোনায় প্রতিটি প্রাণের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।    

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “অষ্টছ্যাঁদা (Ostochayanda)”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Close Menu
×
×

Cart